চোরাবালি থেকে বাঁচার উপায় কি? চোরাবালি কি? what is quicksand and how does it work? - Bengali

চোরাবালি থেকে বাঁচার উপায় কি? চোরাবালি কি? চোরাবালির প্রকারভেদ গুলি কি কি?

ছোট থেকে বড় প্রায় সকলেই আমরা শুনে এসেছি চোরাবালির কথা চোরাবালি মানে মরণফাঁদ কিন্তু সত্যিই কি চোরাবালি মরণফাঁদ।
আচ্ছা বলুন তো আপনি এরকম কটি সিনেমা দেখেছেন যে যেখানে হয়তো নায়ক চোরাবালিতে পড়ে যায় এবং গাছের ডাল বা কোন শক্ত কিছু ধরে সেখান থেকে উঠে আসে। সিনেমাতে যদি নাও শুনে থাকেন তাহলে গল্পে এই চোরাবালের কথা শোনেননি অথবা কোথাও চোরা বালির নাম কোনদিন শোনেননি এমনটা কোনদিন হতেই পারে না।
যদি আপনি এই সিনেমাতে দিকে থাকা চোরাবালি এর কথাটি সত্য ভেবে থাকলে আপনি সবথেকে বড় বোকামির কাজ করবেন। আসলে বাস্তবে চোরাবালির গভীরতা কয়েক ফুটের বেশি হয় না। বলা বাহুল্য এই কয়েক ফুট গভীরতা মানুষের মনে মৃত্যু ভয় ডেকে আনতে পারে। চোরাবালিতে যদি কোনদিন আপনি পড়ে যান তাহলে কোনদিনই কেউ আপনাকে ভিতরের দিকে টানবে না বরং চোরাবালিতে তলিয়ে যাওয়ার কাজটি করবেন আপনি নিজেই। ব্যাপারটি হয়তো আপনার অদ্ভুত লাগতে পারে।
(চলুন বন্ধুরা জেনে নেয়া যাক চোরাবালি সম্পর্কে আরো কয়েকটি মজার তথ্য)

চোরাবালি কি?


👉 চোরাবালি সাধারণ বালির মতোই একটি জিনিস কিন্তু এটি দীর্ঘ সময় ধরে জল, পলি এবং বালি এর সংমিশ্রণ তৈরি হওয়া এক কোলয়েড জাতীয় দ্রবণ। যেদিকে ইংরেজিতে বলা হয় "Quicksand"

চোরাবালি সৃষ্টি হওয়ার কারণ?


👉 চোরাবালি এবং সাধারণ বালির মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই কিন্তু সাধারণ বালিতে দাঁড়ালে আমাদের পা কিছুটা ঢুকে গেলও বেশিদূর যেতে পারে না এর কারণ বাড়িতে থাকা ঘর্ষণ বল আমাদের তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা।
ওদিকে চোরাবালি অনেক জল দ্বারা সম্পৃক্ত হওয়ায় এটি একটি কলয়েড দ্রবণ সৃষ্টি করে। ফলে মাটির ভার বহন ক্ষমতা কমে যায় আর মূলত এইরকম প্রাকৃতিক কারণেই সৃষ্টি হয়ে থাকে চোরাবালি।

চোরাবালিতে পড়ে গেলে কি করণীয়?


👉 আপনি হয়তো টিভিতে কিংবা কোন গল্পতে চোরাবালির কথা শুনে থাকলে হয়তো ভেবে থাকবেন যে চোরাবালি থেকে বেরোনো হয়ত খুব কঠিন কিন্তু ব্যাপারটি খুবই সহজ।
চোরাবালি সাধারণত উপর থেকে দেখে বোঝা খুবই কঠিন। এটি সাধারণ বালির মতোই হয় এবং এটির মধ্যে থেকে জল চুইয়ে পরে। এই কারণে চোরাবালি কে দেখে আপনার সাধারণ কাদাও মনে হতে পারে। প্রথমে আপনি চোরাবালিতে পা দিলে বুঝতে পারবেন না যে এটি চোরাবালি।
চোরাবালিতে পড়ে গেলে আপনার প্রথম কাজটি হবে আতঙ্কিত না হওয়া,চোরাবালি থেকে বেরোতে হলে সব থেকে প্রথমে আপনাকে শান্ত থাকতে হবে। আপনাকে প্রথমেই বলা হয়েছে যে চোরাবালি কয়েক ফুট এর বেশি গভীর হয় না তাই চোরাবালিতে পড়ে গেলে আপনার জুতা জোড়া হারানোর সম্ভাবনাই প্রকট।
চোরাবালিতে পড়ে গেলে প্রথমে কয়েকটি বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত আপনি মারা যাচ্ছেন না এটি নিশ্চিত এবং দ্বিতীয়তঃ আপনি যতটাই বল প্রয়োগ করবেন ততটাই আপনি তার ভিতরে ঢুকে যাবেন। তাই নড়াচড়া না করে শান্ত থাকতে হবে। কখনোই হাত পা ছোড়ার চেষ্টা করবেন না এটি করলে আপনি কোন সফলতা পাবেন না ,হতে পারে আপনি আরো চোরাবালির গভীরে চলে যাবেন।
মানব দেহের ঘনত্ব প্রতি ঘন ফুটে ৬২.৪ পাউন্ড এই ঘনত্ব নিয়ে মানুষ সহজেই জলের মধ্যে ভেসে থাকতে পারে। অন্যদিকে চোরাবালির ঘনত্ব প্রতি ঘন ফুটে ১২৫ পাউন্ড তার মানে বুঝতেই পারছেন যে মানুষ সহজেই চোরাবালির উপর ভেসে থাকতে পারে।
এবারে জেনে নেয়া যাক আপনি কিভাবে চোরাবালি থেকে বেরোবেন, আপনার কাছে যদি কোন ব্যাগ থেকে থাকে তাহলে সেটি খুলে ফেলুন কারণ আপনার ভার যতই কমবে ততই ভালো। এবং চেষ্টা করুন পায়ের জুতোটিও খুলে ফেলতে। যদি আপনি পায়ের জুতো না খুলতে পারেন তাহলে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই হতে পারে আপনাকে একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে। যদি চোরাবালিতে আপনার একটি পা পড়ে থাকে তাহলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে পিছনের দিকে সরে আসুন তাহলে চোরাবালি থেকে বেরিয়ে আসা অনেক সহজ হবে আর চোরাবালি তরলে পরিণত হতে এক মিনিটের বেশি সময় নেয়। আপনি সচেতন থাকলে এক মিনিটের মধ্যেই চোরাবালি থেকে আপনার পা বার করে আনতে পারবেন।
আর যদি আপনি চোরাবালিতে অনেকটা পড়ে যান তাহলে আপনাকে একটু বেশি কষ্ট করতে হবে। ধরুন আপনি চোরাবালিতে না পড়ে কোন একটি বড় পুকুরে পড়ে গেছেন তাহলে আপনি সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য অবশ্যই সাঁতার কাটার চেষ্টা করবেন, এক্ষেত্রেও আপনাকে একই কাজ করতে হবে। প্রথমে নিজের দেহকে অনুভূমিক করে পিঠের ওপর ভর দেয়ার চেষ্টা করুন। এভাবে আপনার শরীরের ভর সমানভাবে বন্টন হবে এবং এর ফলে আপনি সহজে ভেসে থাকতে পারবেন। এরপর আপনাকে জোরে চেঁচাতে হবে, আর আপনার পা দুটিকে ঝাঁকিয়ে বালি গুলিকে আলগা করতে হবে এবং আস্তে আস্তে আপনার পা টাকে উপরে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। থাকলে যেভাবে হাত গুলিকে কাজে লাগানো হয় এখানে ও সেভাবে করার চেষ্টা করুন। তবে সাবধান আপনার হাত দুটিকে একসাথে ঢুকিয়ে কখনো এটি করার চেষ্টা করবেন না তাহলে হয়তো আপনি আরো চোরাবালি তে আটকে যেতে পারেন। এবং এভাবে যখন আপনি শক্ত মাটির নাগাল পাবেন তখন আপনি নিজেকে বের করে নিয়ে আসুন। এটিই হল চোরাবালি থেকে বেরিয়ে আসার সবচেয়ে সহজ উপায়।

এরপর হয়তো আপনাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে চোরাবালি কে কি একদমই ভয় পাও না?
চোরাবালি একদমই যে অহিংস্র তা কিন্তু নয় আবার চোরাবালি একদমই যে বিপজ্জন ক তাও কিন্তু নয়।
চোরাবালিতে পড়ে গেলে আপনার ব্যাগ হারানো ও জুতা হারানো ছাড়া এর থেকে বেশি কিছু ক্ষতি হবে না। কিন্তু এখানে ব্যাপারটি নির্ভর করে আটকে যাওয়া পরিস্থিতির ওপর, চোরাবালিতে আটকাবার পর মৃত্যুর খবর শোনা যায়নি এমন কথা বলা যাবে না। চোরাবালিতে সমুদ্রের ধারে আটকে পড়ে সমুদ্রের ঢেউয়ে মৃত্যুর খবর শোনা গেছে। যদি কোন জনমানবহীন জায়গায় চোরাবালিতে আটকে পড়া নিজেকে উপরে টেনে আনতে ব্যর্থ হয় তাহলেও হয়তো মৃত্যু ঘটতে পারে। অথচ আপনি যদি ছোটবেলাতে পড়ে যাওয়ার পর মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতিটা বুঝে যদি কাজ করেন তাহলে আপনি সহজে চোরাবালি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।

চোরাবালির প্রকারভেদ কি কি?


👉 চোরাবালি সাধারণত দুই রকমের হয় একটি হল শুষ্ক আরেকটি হলো ভিজে।

শুষ্ক চোরাবালি :- চোরাবালি তখনই তৈরি হয় যখন বালুকণা অত্যন্ত হালকা গঠন তৈরি করে। শুষ্ক চোরাবালি এমনই হয় যে খুব কষ্ট করে নিজের ভর ধরে রাখে তাহলে একবার ভাবুন নিজে পড়ে গেলে কি হবে। তাসের ঘর যেভাবে পলকের মধ্যে ভেঙে যায় তেমনি এই চোরা বালির মধ্যে পড়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে আপনি তার মধ্যে ঢুকে যাবেন। এখানে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই কারণ শুষ্ক চোরাবালি গবেষণাগার ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যম দিয়ে বালুর মধ্যে বায়ু চলাচল করিয়ে এই শুষ্ক চোরাবালি তৈরি করেন। তবে বিজ্ঞানীরা এই শুষ্ক চূড়াওয়ালির অস্তিত্ব একেবারে ই অবহেলা করেন না। যদি কখনো মানুষ এই শুষ্ক চোরাবালির কবলে পড়েন তাহলে ভাগ্যের উপর ভরসা করা ছাড়া আর কিছুই করা থাকবে না


ভিজে চোরাবালি :- ভিজে চোরাবালি সাধারণত কোন জলাশয়ের পাশেই দেখা যায়। ভিজে চোরাভালে সৃষ্টি হওয়ার কারণ হলো জলাশয় থেকে বেরিয়ে আসার জল ও সেখানে থাকা বালি ও পলি একসাথে মিশে একটি কলয়েড সৃষ্টি করে। এবং এই দ্রবণটি ধীরে ধীরে সবকিছু নিজের মধ্যে গ্রাস করতে থাকে। কিন্তু আপনাদেরকে এখানে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। কারণ চোরাবালি সিনেমাতে দেখানোর মতো ভয়ানক হয়না চোরাবালিতে পড়ে গেলে আপনি সহজেই বেরিয়ে আসতে পারবেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post